ঢাকা ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণকে টেকসই সহায়তার জন্য ওআইসি'র  আহ্বান

রোহিঙ্গা শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণকে টেকসই সহায়তার জন্য ওআইসি'র  আহ্বান

অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি), ইসলামিক সলিডারিটি ফান্ড, কাতার ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট, কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, এবং কুয়েত যাকাত হাউজ-এর সম্মিলিত বাংলাদেশ সফর শেষ হয়েছে। ২০২২ সালের ওআইসি-ইউএনএইচসিআর যৌথ কর্ম পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সফরটির আয়োজনে ছিল জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসার নজিরবিহীন ঘটনার ছয় বছর পর, এই সফরে উঠে আসে মানবিক পরিস্থিতির ক্রমাবনতি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনের কথা।

ডেলিগেশন টিমটি ইউএনএইচসিআর এর অংশীদার সংস্থাসমূহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং শরণার্থী ও স্থানীয়দের সুতীব্র চাহিদা সম্পর্কে অবগত হন। তাঁরা আরও দেখেন কিভাবে দাতব্য সহায়তার উপর উভয় জনগোষ্ঠী্র নির্ভরশীলতা কমাতে বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করা যায় এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে দক্ষতা উন্নয়ন ও সক্ষমতা গঠন কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবিকামূলক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা। সফর চলাকালীন সময়ে ভারী মৌসুমী বৃষ্টিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শরণার্থীদের ঘর, স্থাপনা ও অবকাঠামো; যা বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর জীবনকে আরও নাজুক করে তুলেছে। জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি কমাতে ও বৈরি আবহাওয়ায় ক্যাম্পের পরিস্থিতির ক্রমাবনতি রোধে ইউএনএইচসিআর-এর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেন সফরকারী দলের প্রতিনিধিবৃন্দ।

ওআইসি’র সহকারী মহাসচিব এম্বাসেডর তারিক আলী বাখিত বিশ্বের অন্যতম সংকটাপন্ন শরণার্থী রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বিশেষ করে সাধুবাদ জানান ক্যাম্পের লার্নিং সেন্টারগুলোতে বার্মিজ ভাষায় মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা গ্রহণে সুযোগ দেয়ার জন্য, যা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের পর মিয়ানমারে তাদের নিজ সমাজে পুনর্বাসনের জন্য প্রস্তুত করবে। তিনি বলেন, “আমি সকল দেশকে, বিশেষত ওআইসি’র সদস্য রাষ্ট্রদের, আহ্বান জানাই রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগণের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ সরকার ও মানবিক অংশীদারদের উদারভাবে সাহায্য করতে ও একাত্মতা বজায় রাখতে।

ওআইসি’র রেজল্যুশন অনুযায়ী রোহিঙ্গা সংকটের একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছুতে ও সমস্যার মূল কারণ নিয়ে কাজ করতে কূটনৈতিক ও মানবিক প্রচেষ্টা অবশ্যই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিতে হবে”।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের প্রচেষ্টা মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারে তাদের টেকসই পুনর্বাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রয়েছে। সংকট সমাধানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় বিবেচনা করতে হবে ক্যাম্পে তাদের সক্ষমতার নির্মাণ, এবং তৃতীয় দেশে পুনর্বাসন, শিক্ষা ও কাজের সুযোগ।

বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টেটিভ) ইয়োহানেস ভন ডার ক্লাও বলেন, “বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা ও একাত্মতার জন্য ওআইসি’কে ধন্যবাদ জানাই। রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক তহবিল গুরুতরভাবে কমে গিয়েছেক, যার প্রমাণ হিসেবে আমরা দেখছি তাদের খাদ্য সহায়তা দুইবার হ্রাস পেয়েছে। রোহিঙ্গারা মানবিক সাহায্যের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছে না, আর তারা সেটা চায়ও না। তাদের স্বনির্ভর করে তুলতে আমাদের সবাইকে একজোট হয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে”।

ইউএনএইচসিআর-এর জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের দেশগুলোতে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি খালেদ খালিফা রোহিঙ্গাদের সাহায্যে সম্মিলিত দায়িত্বশীলতার উপর গুরুত্বারোপ করেন, এবং মানবিক কার্যক্রমে অব্যাহত সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমরা আশা করি এই সফরের মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে দশ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানকারী বাংলাদেশের জন্য নতুনভাবে রাজনৈতিক ও মানবিক সাহায্য আসবে”।

এই বছরের শুরুতে কক্সবাজার ও ভাসান চরে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় বাংলাদেশী জনগণের জন্য মানবিক সংস্থাগুলো ৮৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সাহায্যের আবেদন জানায়। ২০২৩ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত সেই যৌথ মানবিক পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় তহবিলের মাত্র ২৮ শতাংশ পাওয়া গেছে, যার ফলশ্রুতিতে সংস্থাগুলো শুধুমাত্র অতি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলো মেটাতে বাধ্য হচ্ছে।

রোহিঙ্গা,সহায়তা,আহ্বান
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত